লেখক: মো. মনিরুল ইসলাম(রয়েল)
এখনকার উপন্যাসে অন্যান্য বিষয়ের সাথে প্রেম আছে, শারীরিক সম্পর্ক আছে, আর প্রেমের সেই আকুতিও আছে।
কথাসাহিত্যের একেবারে গোড়ার দিকে পুরুষ লেখকরা নারীদের জন্য যে মাপকাঠি সৃষ্টি করেছিলেন, সে অনুযায়ী তারা চরিত্রগুলো সৃষ্টি করতেন। তার মধ্যে ছিল নারীর শারীরিক সৌন্দর্য, নারীর রহস্যময় রূপ। আর ছিল তার কতগুলো কাজকর্ম, যেগুলো নারী মানেই করতে হবে। সেগুলোর মধ্যেই চরিত্রগুলো ঘোরাফেরা করতো। সেই জায়গায় একবিংশ শতাব্দীতে কাবেরির মতো একটি চরিত্র সত্যিই খুব উল্লেখযোগ্য। আমি নিজেও এই যুগের নারী আদর্শে বিশ্বাসী। লেখক আরম্ভ করেন একটা সামাজিক অবস্থান থেকে। কিন্তু যত এগোন নিজের সৃষ্টিকর্মের মধ্যে, তিনি ততই হারিয়ে যেতে থাকেন এবং সেই সত্যটা প্রকাশিত হতে থাকে এই উপন্যাসে। মানে চরিত্রগুলো তার নিজের মতো করে সৃষ্টি হতে থাকে। এটা সমাজ নিরীক্ষা, দর্শন ইত্যাদির কারণে হয়ে যায়। সেটা জানি বলেই আমরা এখনকার লেখকদের লেখা পড়ে অভিভূত হতে পারছি। আগে যেমন প্রেমের উপন্যাস মানে প্রেমেরই উপন্যাস। সেখানে প্রেমটাকে মুখ্য করে দেখা হতো। বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে প্রেমের সাথে অন্যান্য বিষয় চলে এসেছে। যেগুলো বাদ দিয়ে জীবনে শুধু প্রেমটা মুখ্য হতে পারে না। তাই এখনকার উপন্যাসে অন্যান্য বিষয়ের সাথে প্রেম আছে, শারীরিক সম্পর্ক আছে এবং প্রেমের সেই আকুতি লক্ষ করা যায়। তরুণ কথাশিল্পী মো. মনিরুল ইসলাম (রয়েল)-এর লেখা ‘কাবেরি’ উপন্যাসের পছন্দের চরিত্রের মধ্যে কাবেরির কথা বলব। কাবেরি ইন্টেলেকচুয়াল সেই সঙ্গে রোমান্টিকও বটে। এ সমস্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে কাবেরিকে একবিংশ শতাব্দীর নারীদের সাথে অনায়াসেই সম্পর্কিত করা যায়। যে কিনা বিয়ের পর আবার নতুন করে প্রেমে পড়ে আর সেটা স্বামীকে হারানো ও সমাজের নিন্দার ভয়ে গোপন রাখে।
নারী আমার কাছে শুধু প্রাকৃতিক লিঙ্গ নয়। নারী মানুষ। মানুষের মানবাধিকার সত্যের সঙ্গে নারীর সামাজিক অবস্থান আমার কাছে বৃহত্তর সত্য। এখানে নারী-পুরুষের পার্থক্য নেই। নারী-পুরুষের লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য আছে কিন্তু সামাজিক অবস্থানের পার্থক্য নেই। এভাবে সাহিত্যে আমি নারীকে দেখি। এ উপন্যাসের কাবেরি চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আমার হৃদয়ে সত্যিই পুলকিত করে। আশা করি বইটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে।
ড. সেলিনা হোসেন
কথাসাহিত্যিক ও
সভাপতি, বাংলা একাডেমি
Reviews
There are no reviews yet.